মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০১৬

সাবধান!!!!! কি খাচ্ছেন !!!!

খাদ্যে ভেজাল ও এর ক্ষতিকারক প্রভাব

ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার
ভেজাল খাদ্যপণ্যে স্বাস্থ্যঝুঁকি :মানুষের ৫ টি মোলিক চাহিদা (খাদ্য, ব¯্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য) এর মধ্যে খাদ্য একটি প্রধান ও অন্যতম মৌলিক চাহিদা। জীবন ধারনের জন্য খাদ্যের কোন বিকল্প নেই। সুস্বাস্থ্যের  জন্য প্রতিটি মানুষের  প্রয়োজন  বিশুদ্ধ ও পুষ্টিকর খাদ্য। আর এই বিশুদ্ধ খাদ্য সুস্থ ও সমৃদ্বশালী জাতি গঠনে একান্ত অপরিহার্য। কিন্তু বাংলাদেশে বিশুদ্ধ খাবার প্রাপ্তি কঠিন করে ফেলছে কিছু বিবেকহীন ব্যবসায়ী ও আড়তদার। আইনশৃংখলা বাহিনী ও এদের নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশীম খাচেছ। বিশুদ্ধ খাবারকে তারা কিভাবে বিষে পরিণত করছে তারেই কিছু প্রতিবেদন এখানে প্রকাশ করা হল।
১৯৯৪ সালে আমেরিকার এনভায়রনমেন্ট প্রটেকশান এজেন্সির প্রতিবেদনে প্রকাশ, ফরমালিন ফুসফস ও গলবিল এলাকায় ক্যানসার সৃষ্টি করে। ২০০৪ সালের ১অক্টোবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়ে গলবিল এলাকায় ক্যানসার সৃষ্টির জন্য ফরমালিনকে  দায়ী করে। টেক্সটাইল কালারগুলো খাদ্য ও পানীয়ের সঙ্গে মিশে  শরীরে প্রবেশের পর এমন কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নেই যার ক্ষতি করে না। তবে সবচেয়ে বেশী দৃশ্যমান ক্ষতিগুলো হয় আমাদের লিভার, কিডনি, হৃদপিন্ড ও অস্থিমজ্জার। ধীরে ধীরে এগুলো নষ্ট হয়ে যায়। বাচ্চা ও বৃদ্ধদের বেলায় নষ্ট হয় তাড়াতাড়ি, তরুনদের কিছুটা দেরিতে।
খাদ্যপণ্য ভেজালের কারণেই দেশে বিভিন্ন রকমের ক্যানসার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেলিউর, হৃদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানি এগুলো অনেক বেড়ে যাচেছ। আর আমরা প্রতিনিয়ত দেখতে পাচিছ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের নিকট রোগীদের লন্বা লাইন। জাতীয় হৃদরোগ হাসপাতালের শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা: আব্দুল্লাহ জানান, ফুটপাতে শরবত তৈরির ব্যবহৃত পানি ও বরফ দুষিত। এর ফলে হেপাটাইটিস-ই ও হেপাটাইটিস-এ রোগ সংক্রমণের প্রবণতা রয়েছে। শরবতে ব্যবহৃত রং কিডনি ও লিভারে জটিলতা সৃষ্টি করে। একই গ্লাস বারবার ব্যবহারের ফলে একজনের রোগ জীবাণু সংক্রমিত করে অন্যকে। কৃষিবিদ ড. আঃ মান্নান বলেন ব্যবসায়ীরা যেসব নি¤œমানের কার্বাইড ব্যবহার করেন তা থেকে আর্সেনিক তৈরি হয়। আর্সেনিক হলো সেঁকো বিষ। সেই বিষই ফলের মধ্যে থেকে যায় এবং মানব শরীরে প্রবেশ করে। ফল ভালো করে ধুয়ে খেলে কম ক্ষতি হলেও নির্মূল হয় না কখনো। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের ‘বিষাক্ত খাদ্য জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি’ শীর্ষক সেমিনারে বলা হয়, শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা দেশে প্রায় ১৫ লাখ।
কেমিক্যাল মিশ্রিত বা ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে যে উপসর্গগুলো দেখা যায় সেগুলো হলো- পেটব্যাথাসহ বমি হওয়া, মাথাঘোরা, মল পাতলা বা হজম বিঘিœত মল, শরীরে ঘাম বেশী হওয়া এবং দুর্বল হয়ে যাওয়া, পালস্ রেট কমে বা বেড়ে যেতে পারে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. তাজমেরী এস এ ইসলাম বলেন, ইউরিয়া ও হাইড্রোজ হচ্ছে এক ধরণের ক্ষার। এগুলো পেটে গেলে রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে পেপটিন এসিড তৈরি করে যা ক্ষুধামন্দা, খাবারে অরুচি, বৃহদান্ত ও ক্ষুদ্রান্তে প্রদাহসহ নানা রকম শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করে। জাতীয় কিডনি রোগ ও ইউরোলজি ইনস্টিটিউটের ডা. আহমদ সাইফুল জব্বার বলেন, মেটাল বেইজড ভেজাল খাবারে কিডনি স্বল্পমাত্রা থেকে সম্পূর্ণ বিকল হতে পারে। পরিপাকতন্ত্রে ভেজাল খাবারের জন্য হজমের গন্ডগোল, ডায়েরিয়া এবং বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঢাকা শিশু হাসপাতালের এনেসথেসিয়া ডা. মো. মিল্লাত-ই-ইব্রাহীম বলেন, বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি ও ফলমূল উৎপাদনের জন্য কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে এ খাবারগুলোতে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বিষক্রিয়া কার্যকর থাকে। যা রান্না করার পরও অটুট থাকে। তা ছাড়া বিভিন্ন প্রকার মুখরোচক খাবার ও ফলমূল আকর্ষণীয় করে ও দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করার জন্য ক্ষতিকর কার্বাইড, ইন্ডাশট্রিয়াল রং, ফরমালিন, প্যারাথিয়ন ব্যবহার করা হয়। এগুলো গ্রহণের ফলে কিডনি, লিভার ফাংশন, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন প্রকার জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ভেজাল খাবারের কারনে যে রোগগুলো দ্ধারা মানুষ বেশী আক্রান্ত হয় তাহলো অ্যালার্জি, অ্যাজমা, চর্মরোগ, বমি, মাথাব্যাথা, খাদ্য বিষক্রিয়া (ঋড়ড়ফ ঢ়ড়রংড়হরহম), অরুচি, উচ্চ রক্তচাপ, ব্রেণ স্ট্রোক, কিডনি ফেলিউর, হার্ট অ্যাটাক প্রভ”তি।
শুধু ব্যবসায়িক ফায়দা লুটতেই ইউরিয়া, ফরমালিনসহ নানা কেমিক্যাল মিশিয়ে মাছকে বিপজ্জনক-বিষে পরিণত করা হচ্ছে। হাট বাজার ঘুরে কেমিক্যাল মুক্ত মাছ মেলেনা কোথাও। এর মধ্যেই ক্ষতিকর পিরহান মাছ, রাক্ষুসে মাগুর, জীবনহানিকর পটকা মাছের দেদার বাজারজাত চলছে। বাধা দেওয়ার যেন কেউ নেই। মাঝে মাঝে র‌্যাবের ভ্রাম্যামান আদালতের ঝটিকা অভিযানে বিষাক্ত মাছ জব্দ ও বিনষ্ট করা হয়। কিন্তু মাছে ক্ষতিকর কেমিক্যাল প্রয়োগ মোটেও বন্ধ করা যাচ্ছে না। সবুজ সবজিতেও ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মেশানো হচ্ছে অবাধে। পাইকারী আড়তসমূহে মাছের স্তুপ দিয়ে তার ওপর প্রকাশ্যেই ফরমালিন ছিটানো হতো  অথবা স্প্রে করা হতো কেমিক্যাল মিশ্রিত পানি। প্রশাসনের নজরদারির ভয়ে এখন আর আড়তে কেমিক্যাল মেশানোর ঝুকি নেয় না কেউ। মাছ আহরণ স্থল থেকেই প্রয়োগ করা হয় ফরমালিন। অপেক্ষাকৃত বড় আকারের মাছগুলোতে তাজা থাকা অবস্থায় ইনজেকশনের মাধ্যমে ফরমালিন পুশ করা হয়। আর ছোট আকারের মাছগুলো শুধু ফরমালিন মিশ্রিত পানির ড্রামে চুবিয়ে তুললেই চলে। ব্যবসায়ীরা বাজারে ফরমালিন ব্যবহারের ব্যাপারটা অস্বীকার করলেও পুরান ঢাকার সোয়ারিঘাট বাজারের বেশীরভাগ দোকানেই অবাধে ফরমালিন ব্যবহার করতে দেখা যায়। আড়তগুলো ফরমালিন মিশ্্িরত বরফ দ্বারা মাছের গায়ে ফরমালিন প্রয়োগ করছে অভিনব স্টাইলে। এক্ষেত্রে ফরমালিন মেশানো পানি দিয়েই বরফের পাটা বানানো হয়। সেই ফরমালিন বরফের মধ্যেই দিনভর চাপা দিয়ে রাখা হয় মাছ। সাধারণ পানি দিয়ে বানানো বরফ পাটাগুলো ধবধবে সাদা থাকে, ফরমালিন বরফ পাটার রং থাকে হালকা বাদামি।
রাজধানীতে যত্রতত্র গড়ে উঠেছে শত শত বেকারি কারখানা। কালি-ঝুলি মাখা প্রতিটি কারখানার ভিতরে-বাইরে কাদাপানি, তরল ময়লা-আবর্জনাযুক্ত নোংরা পরিবেশ। দুর্গন্ধের ছড়াছড়ি। আশেপাশেই নর্দমা ময়লার স্তুপ। মশা-মাছির ভনভন আর একাধিক কাঁচা-পাকা টয়লেটের অবস্থান। কারখানাগুলো স্থাপিত হয়েছে টিনসেড বিল্ডিংয়ে। বহু পুরনো চালার টিনগুলো স্থানে স্থানে ছিদ্র থাকায় বৃষ্টির পানি অনায়াসেই কারখানা ঘরে ঢুকে। এতে পিচিছল কর্দমাক্ত হয়ে থাকে মেঝে, কাদাপানি ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় খাদ্য-সামগ্রীতে, কারখানাগুলোতে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা নেই, দম বন্ধ হওয়া গরম থাকে রাত-দিন গরমে ঘামে চুপসানো অবস্থায় খালি গায়ে বেকারি শ্রমিকরা আটা-ময়দা দলাই-মথাই করে। সেখানেই তৈরি হয় ব্রেড, বিস্কুট, কেকসহ নানা লোভনীয় খাদ্যপণ্য। অভিযোগ আছে উৎপাদন ব্যয় কমাতে এসব বেকারীর খাদ্যপণ্যে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল, পচা ডিমসহ নি¤œমানের বিভিন্ন উপকরণ ব্যবহার করা হয়। কেক ও ব্রেড তৈরির জন্য সেখানে পিপারমেন্ট, সোডা ও ব্রেকিং পাউডার রাখা হয়েছে পাশাপাশি। কারখানা ঘেঁষা একটি ছোট্ট ফেনা উঠে যাওয়া ঘোলাটে পাম ওয়েল তেল, ডিম ও ডালডার মিশ্রণ তৈরি হচ্ছে। বেকারির কারখানায় উৎপাদিত খাদ্যদ্রব্য সতেজ রাখতে ট্যালো, ফ্যাটি এসিড ও ইমউসাইল্টিং, টেক্সটাইল রং সহ নানা কেমিক্যালও ব্যবহার করতে দেখা যায়। আশেপাশের কারখানাগুলোতে দেদারচে ব্যবহার হচ্ছে ভেজাল আটা, ময়দা, ডালডা, তেল ও পঁচা ডিম। বেকারিতে পঁচা ডিম ব্যবহার যেন সাধারণ বিষয়।
ভেজালের বিষ মেশানো হচ্ছে মাদকদ্রব্যে। বিয়ারসহ বিভিন্ন দেশি-বিদেশি মদে ব্যাপকভাবে ভেজালের সন্ধান পাওয়া গেছে। বিদেশি নামিদামি ব্রান্ডের মদ, বিয়ার থেকে শুরু করে দেশীয় চোলাইমদ পর্যন্ত সর্বত্রই ভেজালের ছড়াছড়ি। মাত্রাতিরিক্ত অ্যালকোহল আর রেকটিফাইড স্প্রিট দিয়েই তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন মাদক। কেরু উৎপাদিত বাংলা মদের সঙ্গে ফরেন লিকার মিশিয়ে মাদক বিক্রেতার নকল বিলেতি মদ তৈরি করছে, সেগুলো বিয়ার ক্যান বা ব্রান্ডের মদের বোতলে ভরে দেদারচে বাজারজাত চলছে। রেকটিফাইড স্প্রিট, ইথানল, মিথানলসহ উচ্চ তাপমাত্রার অ্যালকোহল মিশ্রিত করে রাজধানীসহ আনাচে-কানাচে প্রস্থত হচ্ছে নানা নামের বিভিন্ন স্টাইলের মাদক। বিভিন্ন পানীয়, বিয়ার ও দেশি বিদেশি মদের বোতলের লেভেলে ঘোষিত অ্যালকোহল মাত্রার চেয়ে কয়েকগুন বেশী ব্যবহার করে মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে মাদক-বিয়ার ব্যবসায়ীরা। দেশীয় চোলাই মদ মিশিয়ে বিভিন্ন ব্রান্ডের বিদেশি মদের বোতলে ভরে উচ্চ মূল্যে বিক্রি করা হয়। অন্যদিকে দেশীয় চোলাইমদের সঙ্গে অতিমাত্রায় অ্যালকোহল মিশিয়েও তৈরি হচ্ছে তীব্রতাযুক্ত ‘শক্তিশালী মাদক’। যেগুলো সেবন করে ডকসাইটে মাদকসেবীরও সম্বিত হারিয়ে ফেলেন, এমনকি অনেক ক্ষেত্রে মৃত্যুর কোলেও ঢলে পড়ছে মাদকসেবীরা। বিভিন্ন ড্রিংকসের সঙ্গেও অ্যালকোহল ও অতিমাত্রায় রেকটিফাইড স্প্রিট মিশিয়ে বিয়ার হিসেবে বাজারজাতও চলছে অবাধে।
রেকটিফাইড স্প্রিট ব্যবহার করে দেদার তৈরি হচ্ছে এনার্জি ড্রিংকস ও ফিলিংস জুস। র‌্যাবের অভিযানে গাজীপুর, শ্রীপুর, কালিয়াকৈর এলাকায় ১০টির বেশী নকল জুস কোম্পানি সিলগালা করেও থামানো যাচ্ছে না ভেজাল জুসের উৎপাদন। এক্ষেত্রে বিএসটিআইয়ের নামে প্রতি মাসে লাখ টাকা মাসোহারা প্রদানের ভিত্তিতে মানবদেহের জন্য ক্ষতিকর এ পণ্য ব্যাপকহারে উৎপাদন ও বাজারজাত চলছে।
বিএসটিআইতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এনার্জি ড্রিংকস বলতে কোনো পণ্যসামগ্রী উৎপাদন বা বাজারজাতের জন্য বিএসটিআই কোনো রকম অনুমোদন দেয় না। তা সত্ত্বেও অনুমোদন পাওয়ার জন্য একটি আবেদনপত্র বিএসটিআই কার্যালয়ে জমা দিয়েই কারখানায় দেদার উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। বিএসটিআইয়ের কেমিক্যাল বিভাগের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, যে কোনো ড্রিংকস উৎপাদন ও বোতলজাতের ক্ষেত্রে প্রথম শর্তই হচ্ছে অটো মেশিনে সার্বিক কার্যক্রম পরিচালনা করা। নির্ধারিত ১২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় তরল উপকরণসমূহ ফুটিয়ে নিয়ে তা রিফাইন
করার মাধ্যমে সংমিশ্রণ ঘটানো এবং বোতলজাত করা থেকে মুখ লাগানো পর্যন্ত সবকিছুই অটো মেশিনে ধারাবাহিকভাবে সম্পন্ন হওয়ার কথা। কিন্তু কথিত জুস কারখানাগুলোতে সবকিছুই চালানো হচ্ছে হাতুড়ে পদ্ধতিতে।
অধিক মুনাফার আশায় একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী মশলায় কাপড়ে ব্যবহৃত বিষাক্ত রং, দুগন্ধযুক্ত পটকা মরিচের গুঁড়া (নি¤œমানের মরিচ)  ধানের তুষ, ইট ও কাঠের গুঁড়া, মোটর ডাল ও সুজি ইত্যাদি মেশাচ্ছেন। বাংলাদেশ ষ্টান্ডডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনষ্টিটিউট (বিএসটিআই) ও কন্জিউর্মাস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)- এর অনুসন্ধানে এ তথ্য বেরিয়ে আসে। ভেজাল মশলা কিনে ক্রেতারা শুধু প্রতারিতই হচ্ছেন না, এতে তৈরি হচ্ছে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি। কারণ ভেজাল মশলায় মেশানো ক্ষতিকর খাদ্যদ্রব্য ক্যানসার, কিডনি ও লিভারের রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। অনুসন্ধানে জানা যায়, ভেজাল মশলা উৎপাদনকারী গুঁড়া মরিচের সঙ্গে একশ্রেণীর ব্যবসায়ী মেশাচ্ছেন ইটের গুঁড়া। হলুদে দেয়া হচ্ছে মটর ডাল, ধনিয়ায় স‘মিলের কাঠের গুড়া ও পোস্তদানায় ব্যবহৃত হচ্ছে সুজি। মশলার রং আকর্ষনীয় করতে বিশেষ ধরনের কেমিক্যাল রং মেশানো হচ্ছে। এর কারণে গুঁড়া মরিচের ঝাল বাড়ে এবং হলুদের রং আরও গাঢ় হয়। মশলার ওজন বৃদ্ধির জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে ধানের ভুসি। অসাধু চক্র প্রথমে গোপন কারখানায় ভেজাল মশলা উৎপাদন করে। পরে তা প্যাকেটজাত করে খোলাবাজারে সরবরাহ করে। তারা কিছু প্যাকেট ছাড়া, কিছু সাধারণ প্যাকেটে এবং কিছু নামিদামি কোম্পানীর লেভেল লাগিয়ে মশলা গুলো বিক্রি করেন।
ভেজালের বিষ শুধু খাদ্যপণ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে না, বিষ ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে জীবন রক্ষাকারী ঔষুধের মধ্যেও। পানি শুন্যতা রোধ করে জীবন রক্ষাকারী স্যালাইন পর্যন্ত ভেজাল মিশিয়ে বিষে পরিণত করা হয়েছে। এখনও ফুটপাতেই বিষময় ওষুধের পসরা সাজিয়ে বসছেন ভেজাল হাতুড়ে ডাক্তাররা। খোদ রাজধানীতেই জীবন রক্ষাকারী ‘মহৌষধ’ বেচাকেনা চলছে ফেরি করে। সর্বরোগের মহৌষধ বিক্রির নামে মহানগর জুড়ে চলছে সীমাহীন প্রতারণা। রাজধানীর রাস্তা-ফুটপাত, মোড়, বাজার, ট্রেন স্টেশন, লঞ্চ ও বাস টার্মিনালসহ দেড় শতাধিক স্থায়ী স্পট রয়েছে ওষুধ ফেরিওয়ালাদের। বেআইনিভাবে ফেরি করে বিক্রি করা তথাকথিত জীবন রক্ষাকারী ওষুধ ব্যবহারে রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে তা আরও জটিল হচ্ছে। ক্যানভাসাররা কিডনি, এইডস্ এবং বিনা অপারেশনে অর্শ্ব ভগন্দরসহ নানারকম জটিল রোগ নিরাময়ের পূর্ণ নিশ্চয়তা দিয়ে থাকে। ওষুধ বিক্রির সময় হাতে হাতে তাদের নিজস্ব প্রচারপত্রও বিলি করে। দেশের বিভিন্ন স্থানে ‘অব্যর্থ মহৌষধের’ বেচাকেনা সবচেয়ে জমজমাট। এসব ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তা জানান, ওষুধ ফেরিওয়ালাদের বৈধ রেজিস্ট্রেশন বলতে কিছু নেই। কথিত মহৌষধ ব্যবহারে রোগ নিরাময় দূরের কথা বরং স্বাস্থের জন্য তা বড় ধরণের হুমকি হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে গরীব শ্রেণীর মানুষ এতে বেশী প্রতারিত হচেছ । এছাড়া এসব ওষুধ সেবনের কারনে রোগ আরও জটিল আকার ধারণ করে। এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে।

চলবে...
————————————–
লেখক:ড. মো. দেলোয়ার হোসেন মজুমদার
কৃষি গবেষক ও পুষ্টিবিদ
উপ-পরিচালক (কৃষি সম্প্র: ও গ্রমীণ অর্থনীতি),
জাতীয় কৃষি প্রশিক্ষণ একাডেমি, গাজীপুর।